সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ০৭:১৯ অপরাহ্ন

নির্যাতনে ওষ্ঠাগত নারীর প্রাণ বাড়ছে পুরুষ নির্যাতনও

নির্যাতনে ওষ্ঠাগত নারীর প্রাণ বাড়ছে পুরুষ নির্যাতনও

স্বদেশ ডেস্ক:

সারাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে নারীর প্রতি সহিংসতা। ঘরে-বাইরে প্রতিনিয়তই নির্যাতন-নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন বয়সী নারী। খুন-ধর্ষণের ঘটনাও প্রতিদিন ঘটছে দেশের কোথাও না কোথাও। পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক যে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই নির্যাতিত হয়েছেন ৫২৪ নারী। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১৬৬ জন; ফেব্রæয়ারিতে ১৫৯ জন, আর গত মাসে (মার্চ) নির্যাতিত নারীর সংখ্যা ছিল ১৯৯ জন। আর চলতি এপ্রিল মাসের গত ১০ দিনেই সারাদেশে নির্যাতিত নারীর সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদ এসব তথ্য জানিয়েছে।

আবার নারীর হাতে পুরুষ নির্যাতনের ঘটনাও দেশে কম নয়। বলতে গেলে, নারী নির্যাতনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পুরুষ নির্যাতনের ঘটনাও। আগে মুখ বুজে বিষয়গুলো সহ্য করলেও লোকলজ্জার ভয়কে পেছনে ঠেলে এখন রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছেন নির্যাতিত পুরুষরা। বিক্ষোভ কিংবা মানববন্ধন করে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা। আগে দৈনিক যেখানে এক-দুটি অভিযোগ পাওয়া যেত, সেখানে চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে প্রায় প্রতিদিনই গড়ে ৪ থেকে ৫ জন

পারিবারিক সহিংসতার শিকার হওয়া পুরুষ মোবাইল ফোনে তাদের অভিযোগ জানিয়েছেন। আর লিখিত অভিযোগকারীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে দুই শতাধিক। ভয়াবহ এই তথ্য দিয়ে নির্যাতিত পুরুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করা বেসরকারি সংগঠন ‘বাংলাদেশ ম্যানস রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএমআরএফ)’ বলছে, আগের তুলনায় সংসারের ব্যয়ভার মেটাতে না পারা এবং পরকীয়ায় আসক্ত স্ত্রীর দ্বারা লাঞ্ছনা আর প্রতারণার শিকার পুরুষদের কাছ থেকেই এসেছে বেশিরভাগ অভিযোগ।

বাংলাদেশ ম্যানস রাইটস ফাউন্ডেশনের (বিএমআরএফ) চেয়ারম্যান শেখ খায়রুল আলম আমাদের সময়কে বলেন, ‘পুরুষশাসিত এ সমাজে নিজ ঘরেই নির্যাতিত পুরুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাদের কেউ শারীরিক, কেউ মানসিক, কেউ আর্থিক বা সামাজিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন। আগের তুলনায় বর্তমানে স্ত্রী কর্তৃক নির্যাতিত পুরুষের সংখ্যা ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। ছোটখাটো বিষয়েও স্বামীকে সহ্য করতে পারছেন না স্ত্রী। এ প্রবণতা দিনকে দিন বাড়ছে। ২০১৬ সালে যেখানে মাত্র ৫০ জন পুরুষ তাদের স্ত্রীর প্রতি অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন, তার পরের বছর অভিযোগের সংখ্যা বেড়ে হয় ১২০টি; ২০১৮ সালে শুধু আমাদের কাছে নির্যাতিত ১৭০ পুরুষ অভিযোগ জানান। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪০-এ; পরের বছর সংখ্যা বেড়ে হয় ৩৩০। গত বছর অর্থ্যাৎ ২০২১ সালে নির্যাতিত পুরুষের অভিযোগ পাওয়া যায় ৪৫০টি। আর চলতি বছরের গত তিন মাস ১০ দিনে পুরুষ নির্যাতনের অভিযোগ ছাড়িয়েছে ২২৩টি। আজও (গতকাল রোববার) রাজধানীর মিরপুর, রামপুরা, শিবচর, নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া থেকে ৫ জন নির্যাতিত পুরুষ ফোনে করণীয় জানতে চেয়েছেন।’

বিএমআরএফ চেয়ারম্যান বলেন, স্ত্রীর নির্যাতনের বিষয়ে লিখিত অভিযোগে এক মালয়েশিয়া প্রবাসী বলেছেন, প্রবাসে থাকাকালীন পরকীয়ার জেরে তার স্ত্রী গর্ভপাত করে তাদের অনাগত সন্তানকে হত্যা করেছেন। শুধু তা-ই নয়, বিদেশ থেকে পাঠানো সব টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালানোর পর ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টায় স্ত্রী ও তার প্রেমিকের লোকজন তার নামে একাধিক মিথ্যা মামলাও দেয়। নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে স্ত্রীর নির্যাতনের ঘটনার সবিস্তারে তুলে ধরে গত ১৫ মার্চ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ওই প্রবাসী।

বিএমআরএফ চেয়ারম্যান খায়রুল আলম বলেন, ‘ভুক্তভোগী প্রবাসীর মতো এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, যা এলার্মিং। সমাজে নারী-পুরুষ উভয়ের সমান প্রয়োজন ও গুরুত্ব রয়েছে। তবে দেখা যাচ্ছে, এ দুইয়ের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে।’

বিএমআরএফ চেয়ারম্যান বলেন, ‘এমনও দেখা যাচ্ছে যে, উভয়ের সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক হচ্ছে; কিন্তু মামলা হচ্ছে পুরুষের বিরুদ্ধে। তাকে ধর্ষক বানানো হচ্ছে। যদি নারী-পুরুষের সমঅধিকার হয়ে থাকে, তবে অপরাধের শাস্তিও সমান হওয়া দরকার। যদি শাস্তি দিতে হয়, তবে দুজনকেই দেওয়া হোক; কিন্তু তা না করে শুধু পুরুষকেই দোষারোপ করা হচ্ছে, শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পুরুষ অধিকার রক্ষা ও নির্যাতন দমন আইন করা প্রয়োজন।’

নারী ও পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধির পেছনে মূল্যবোধের অবক্ষয়, অবাধ আকাশ সংস্কৃতির প্রবাহ, নৈতিক স্খলন, লোভ-লালসা, উচ্চবিলাসিতা, পরকীয়া, একঘেয়েমি, অস্থিরতা, মাদকাসক্তি, অর্থনৈতিক দৈন্যতাকেই দায়ী করছেন মানবাধিকারকর্মী ও বিশিষ্টজনরা। তাদের মতে, এসবের প্রভাবে এক ধরনের পুরুষদের কাছে স্ত্রীরা হয়ে উঠেছেন তাদের রাগ দেখানোর সহজ উপাদান। আবার অতি তুচ্ছ ঘটনায়ও শারীরিক না হলেও মানসিক যন্ত্রণা দিচ্ছেন, এমনকি স্বামীর গায়ে হাতও তুলছেন নারীদের কেউ কেউ। যার ফলে প্রতিনিয়তই বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা। নারী ও পুরুষের প্রতি সহিংসতা রোধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপশি সচেতনতামূলক কর্মসূচির প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877